এনবি নিউজ : বাসায় গিয়ে সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক মাসেরও বেশি সময় এটি বন্ধ। এতে নগরে বসবাসকারী অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশু-যাদের পক্ষে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করানো প্রায় অসম্ভব, তারা ঝুঁকিতে পড়েছেন। অন্যদিকে এই কাজে সম্পৃক্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের একটি বড় অংশ কর্মহীন দিন পার করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. ইউনুস এনবি নিউজকে বলেন, বলেন, বাড়ি গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কাজটি আমাদের নয়। এটি মূলত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর-এর কাজ। এখন থেকে নমুনা সংগ্রহের সব দায়িত্ব তারাই পালন করবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে করোনা সংক্রমণ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এ অবস্থায় অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলছেন, এই সময়ে সরকারের উচিত ছিল কীভাবে আরও বেশি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া।
জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে অধিদপ্তরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। এর তত্ত্ববধানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লক্ষণযুক্ত রোগীদের নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা হয়েছে। নগরীর কোথাও কোনো অসুস্থ, বৃদ্ধ বা শিশুর দেহে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে নির্ধারিত হট নম্বরে ফোন করলে এই সুবিধা পাওয়া গেছে।
শুরুতে নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রশিক্ষিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাব দেখা দেয়। সেজন্য অধিদপ্তর ওই সময় রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় পৌনে দুইশ টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়। যাদের একটি অংশ এই কাজে সম্পৃক্ত ছিল। এছাড়া একটি প্রকল্পের আওতায় আরও কিছু মেডিকেল টেকানোলজিস্ট এই কাজে নিযুক্ত করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা কাজটি করে আসছিলেন। এজন্য বেশকিছু ভাড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এ খাতে আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় এবং ভাড়াকৃত গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে না পারায় বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতিদিন ৩০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা হতো। অন্যদিকে আইইডিসিআর থেকেও প্রায় দুই-আড়াইশ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এখন অধিদপ্তরের নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো উচিত। একটি দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ঠিক কত শতাংশের করোনা পরীক্ষা করানো দরকার-এমন কোনো তথ্য নেই। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা জন হপকিন্স ইউনির্ভাসিটির পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি যে প্রতি ১০ লাখ জনগোষ্ঠীতে কত জনের পরীক্ষা করা উচিত। তবে যেসব দেশ দ্রুত কোভিড পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পরেছে, তারা প্রতি ১০ লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৮/১০ হাজার থেকে শুরু করে ২৪ থেকে ২৫ হাজার পরীক্ষা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন প্রভৃতি দেশে অধিক হারে পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে যাদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তাদের আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা মানুষকে কোয়ারেন্টিন করা হতো। এভাবেই তারা ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে প্রতি ১০ লাখ জনগোষ্ঠীতে ৬৪৫৯ দশমিক ৮ জনের কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে। শনিবার সারা দেশে মোট ২৯ হাজার ২১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শুক্রবার হয়েছে ৪১ হাজার ৯৪৭ জন, বৃহস্পতিবার ৪৪ হাজার ৯৪১, বুধবার ৪১ হাজার ৭৫৫ এবং মঙ্গলবার ৪৪ হাজার ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়। দেশে কোভিডের শুরুতে মাত্র একটি ল্যাবে শতাধিক পরীক্ষা করা হতো। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬২৭টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে আরটিপিসিআর ১৩০টি, জিনএক্সপার্ট ৫০টি এবং র্যাপিড এন্টিজেন ৪৪৭টি। ল্যাবের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে। তবে এক্ষেত্রে পরীক্ষা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন এনবি নিউজকে বলেন, দেশে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ চলছে। এ পরিস্থিতিতে কোভিড পরীক্ষা হার আরও বাড়াতে হবে। আইএলআই (ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস) নির্ণয় করতে এবং প্রকৃত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করতেও পরীক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যে শুধু আরটিপিসিআর (রিয়াল টাইম পরিমার চেইন রিঅ্যকশন) পরীক্ষা করতে হবে তাই নয়। সারা দেশে মানসম্পন্ন র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বাড়িয়েও সেটি করা সম্ভব। তিনি বলেন, নগরীতে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ বা অসুস্থ রোগী থাকেন। যাদের পক্ষে হাসপাতালে বা নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যয় অনেক বেশি। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাড়ি গিয়ে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।