এনবি নিউজ : সাম্প্রতিককালে সরকারের দ্রুত বিধিনিষেধ শিথিল করার বা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়ো করছে বলে মনে করে কমিটি।
পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে শুক্রবার রাতে বলা হয়—কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সভায় নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো গৃহীত হয়।
১. সারা দেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্টের লকডাউন কঠোরভাবে পালিত না হলেও, জনসমাবেশ হওয়ার মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ থাকায় সংক্রমণ হারে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। তবে, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কোনোটিই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি। এ অবস্থায় সাম্প্রতিককালে সরকারের দ্রুত বিধিনিষেধ শিথিল করার বা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সভা উদ্বেগ প্রকাশ করে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জীবিকা এবং দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার সরকারের দায়িত্ব উপলব্ধি করে ও সরকারের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করে। তবুও সভা মনে করে—বিধিনিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়ো করছে। এর ফলে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা বাড়তে পারে, তাতে অর্থনীতি আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে। লকডাউন আরও এক-দুই সপ্তাহ চলমান রাখতে পারলে এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যেত। এ অবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করে। ন্যূনতম সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি আরও কিছুদিন বন্ধ রাখা, রেস্টুরেন্ট-ক্যাফেটেরিয়াতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা না রেখে কেবল বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া, সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহণ চলাচল, যে ক্ষেত্রে সম্ভব বাড়িতে বসে কাজ করা এবং অনলাইন সভা-কর্মশালা-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখে অফিস খোলা রাখা, শতভাগ সঠিকভাবে তিন স্তরবিশিষ্ট মাস্ক পরার নিশ্চয়তায় এবং অন্যথায় পুনরায় বন্ধ করার বিধান রেখে অফিস, আদালত, ব্যাংক, দোকানপাট ও বাজার খোলা। সব ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
২. সভায় সরকারের কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সদ্য সমাপ্ত ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন-এর মাধ্যমে এক সপ্তাহে ৫০ লক্ষাধিক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানানো হয়। বিভিন্ন মহল থেকে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেওয়ায় জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি মনে করে—ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে এ রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না। সভা গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের কোভিড-১৯-এর টিকা প্রদানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা আরও সহজ ও নিরাপদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে এজন্য টিকাকেন্দ্র নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।
৩. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ ২১ আগস্ট বা নিকটবর্তী যেকোনো তারিখ থেকে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষ ও পঞ্চম বর্ষ বা শেষ বর্ষের ক্লাস চালু করার বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। কমিটির সব সদস্যেরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এরই মধ্যে এসব শিক্ষার্থীদের দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে এই দুই বর্ষের ক্লাস শুরু করার পক্ষে কমিটি মত প্রদান করে।
ক) ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রশিক্ষণ করাতে হবে।
খ) শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
গ) হাসপাতালের ওয়ার্ডে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ঘ) শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের ওপর নজরদারী রাখতে হবে।
ঙ) সংক্রমিত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা/আইসোলেশন এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা শিক্ষার্থীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বাজারে বিভিন্ন মানের মাস্ক পাওয়া যায়। তিন লেয়ারের সঠিক মাস্ক উৎপাদন ও বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।