• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

পুলিশের বিশেষ উদ্দোগে চালু হচ্ছে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র

Avatar
সেন্ট্রাল ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সংবাদটির পাঠক ৫ জন

এনবি নিউজ : আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে এবার পরিচালিত হবে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রিভারভিউ প্রকল্পে এর অবস্থান। পোস্তাগোলা ব্রিজ পার হয়ে এক কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়বে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ। এখন উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষা। ১ অক্টোবর থেকে রোগী ভর্তি করা হবে এখানে। সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে। উন্মুক্ত থাকবে সর্বসাধারণের জন্য। সোমবার সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান সোমবার বলেন, ‘কয়েক বছরের মধ্যে মানিকগঞ্জে আরও একটি অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। আরও জমি কেনা হবে। ওই কেন্দ্রটিতে সুইমিং পুল এবং গার্ডেনসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে সময় লাগবে। এজন্য আপাতত কেরানীগঞ্জে প্রকল্পটি শুরু করছি। সম্পূর্ণ অলাভজনক এই সেবা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। আশা করছি, সফলতার মুখ দেখবে।’

সূত্র জানায়, পুলিশের অত্যাধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটির অন্যতম চমক গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। এই মেশিনের মাধ্যমে রক্ত ও প্রসাব ছাড়াও চুল থেকেও ডোপ টেস্ট করা যাবে। তিন মাস আগেও কেউ মাদক সেবন করে থাকলে তা ধরা পড়বে। দেশে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক এই মেশিনটি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে শতভাগ নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

সাততলাবিশিষ্ট আধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা। ৬০ শয্যার এই কেন্দ্রে আছে ২২টি রুম। পুরুষদের জন্য ১৬টি রুমে থাকছে ৪৬টি শয্যা। মহিলাদের ছয়টি রুমে শয্যা আছে ১৪টি। ডাবল কেবিন ২৮টি, ট্রিপল কেবিন ১৫টি এবং জেনারেল ওয়ার্ডে আছে ১১টি বেড। এছাড়া জেনারেল ট্রিপল বেড আছে ছয়টি। জেনারেল ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ড বা কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রায়ই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু সোমবার সরেজমিন এই কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের রুমগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কেউ চাইলেও আত্মহত্যা করার সুযোগ পাবেন না। কারণ কোনো রুমে সিলিংফ্যান নেই। বিশেষ ফ্যান স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ঝুলে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। ২০ কেজি ওজনের বেশি কিছু ঝুললেই ভেঙে পড়বে ফ্যান। প্রতি রুমেই রয়েছে এটাস্ট বাথরুম। কেউ যাতে বাথরুমে গিয়ে আত্মহত্যা করতে না পারে সেজন্য কোনো বাথরুমেই লক সিস্টেম রাখা হয়নি। রাথরুমগুলোর দরজায় লাগানো হয়েছে ম্যাগনেট। বাথরুমের শাওয়ারে রডের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্লাস্টিক। তাই শাওয়ারেও আত্মহত্যার সুযোগ নেই। প্রতি ফ্লোরের সিঁড়িতে আছে বিশেষ লকের ব্যবস্থা। তাই কোনো রোগী ইচ্ছা করলেই এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে অবাধে চলাচল করতে পারবেন না।

মাদক নিরাময়কেন্দ্রে জানালার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে। কিন্তু ওয়েসিস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের জানালায় রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। জানালার গ্রিল হিসেবে দেওয়া হয়েছে শক্ত নেট। যেখানে কোনো কিছু বাঁধার সুযোগ নেই। জানালার পর্দাগুলো লাগানো হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়। জোরে টান দিলে নিচে পড়ে যাবে। তাই জানালা বা পর্দা ব্যবহার করে আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকছে না। বেশির ভাগ রুমে রয়েছে দুটি করে বেড। তবে ভিআইপি কেউ একা থাকতে চাইলে ওই রুম থেকে একটি বেড অপসারণের সুযোগ রয়েছে।

ছাদে রয়েছে গার্ডেন। ছাদ বাগানে প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে রোগীরা বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়োগা এবং মেডিটেশন করবে। ছাদ বাগানের পাশে রয়েছে ব্যায়ামাগার। ৬ষ্ঠ তলায় আছে নার্সিং স্টেশন। পঞ্চমতলায় আছে বিশেষ কেবিন ও ইনডোর গেমসের ববস্থা। সেখানে আছে টেবিল টেনিসসহ নানা ধরনের খেলার সরঞ্জামাদি। আছে লাইব্রেরি। চতুর্থতলায় রয়েছে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সাধারণ ওয়ার্ড এবং সাধারণ কেবিন। ভবনের তৃতীয়তলায় আছে কেবিন ব্লক, ডাইনিং ও বিশেষ নার্সিং স্টেশন। ভবনের দ্বিতীয় তলা ব্যবহৃত হবে প্রশাসনিক ব্লক হিসেবে। সেখানে থাকছে প্যাথলজি বিভাগও। আছে সাইকোলজি কাউন্সিলিং ও ফ্যামিলি কাউন্সিলিং এবং স্যাম্পল কালেকশন রুম। ওয়েসিসের স্যাম্পল কালেকশন রুমে কোনো ধরনের বেসিন, বাথরুম বা পানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এর ফলে কোনো টেকনিশিয়ান চাইলেও স্যাম্পলের সঙ্গে পানি জাতীয় কিছু মেশাতে পারবে না।

ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে জনবলের সংখ্যা ৮৫ জন। এর মধ্যে একজন পরিচালক (এসপি পদমর্যাদার), তিনজন সহকারী পরিচালক, চারজন কো-অর্ডিনেটর এবং ২৭ জন নার্সিং অফিসার বা মেট্রন রয়েছে। এছাড়া হিসাব শাখায় ২ জন, নিরাপত্তা ও রিসিপশন শাখায় ১১ জন, কন্ট্রোল রুমে ছয়জন এবং প্রশাসন শাখায় জনবল আছে আরও ১৪ জন।

ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের মার্চে ওয়েসিস মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি শুরুর আগে আমরা বিদ্যমান ৩০টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে দেখি। ওইসব কেন্দ্রে যেসব ত্রুটি চোখে পড়েছে, এই কেন্দ্রে সেসব ত্রুটি রাখা হয়নি। তিনি জানান, পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাময় কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবায়ন করা হয়েছে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ভবনটি আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিনা ভাড়ায় নেওয়া হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে এই কেন্দ্রটি মানিকগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হবে।

এ টি


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৫:০০ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ২:৫০ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৫:১১ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৬:৩০ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!