এনবি নিউজ : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকেন্দ্রিক একটি প্রতারক চক্র বন্দির স্বজনদের কাছ থেকে নানা উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।
বন্দি অসুস্থ, মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে, অন্য বন্দির মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে, মামলা হবে, অন্য কারাগারে চালান করে দেওয়া হবে-মোবাইলে স্বজনদের এমন সব ভয়ঙ্কর তথ্য জানিয়ে ভয় দেখানো হয়। পরে বন্দিকে রক্ষার নামে বিকাশে স্বজনদের কাছে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এমন পরিস্থিতিতে বন্দির স্বজনদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
প্রতারক চক্রটি রোববার দুপুরে আশুলিয়ার সারোয়ার হোসেন হিরার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। সোমবার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ডলার আহমেদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।
প্রায় দিনই প্রতারক চক্রটি কোনো না কোনো স্বজনের কাছ থেকে এভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছর ৪ জানুয়ারি প্রতারক চক্রের নারী সদস্য রানু আক্তারকে কারা ক্যান্টিনের সামনে থেকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় রানুসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হলেও থেমে থাকেনি চক্রটি।
জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারাবন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখে কারা কর্তৃপক্ষ। ওই সময় বন্দিদের মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে কারাভ্যন্তরে ১৭টি মোবাইল বুথ স্থাপন করা হয়। সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় বন্দিরা মোবাইল বুথ থেকে সপ্তাহে একবার সর্বোচ্চ ৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পান।
বর্তমানে সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে, তবে মোবাইল বুথগুলো সচল রয়েছে। এসব বুথ থেকে প্রতিদিন সাত শতাধিক বন্দি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারাভ্যন্তরে বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পর স্বজনদের নম্বরগুলো সংগ্রহ করে বাইরে প্রতারক চক্রের কাছে তা সরবরাহ করেন এক শ্রেণির অসাধু কারারক্ষী। বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের একটা অংশ ওই কারারক্ষীও পাচ্ছেন।
আশুলিয়ার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন হিরা জানান, সম্প্রতি তার দুলাভাই রফিকুল ইসলামকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ থেকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় তারা রফিকুলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তবে রফিকুলের সঙ্গে কয়েকবার মোবাইলে কথা বলেছেন।
সোহরাব হোসেন জানান, রোববার দুপুরে জয়নাল নামের এক ব্যক্তি আমাকে ফোন করেন। কারাগারের সেন্ট্রি পরিচয় দিয়ে বলেন, রফিকুল ইসলাম কারাগারের ভেতরে অন্য আসামির সঙ্গে মারামারি করেছে। তার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা হবে। পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এলে রফিকুলকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাকে অন্য কারগারে চালান করে দেওয়া হবে।
রফিকুলকে রক্ষা করতে চাইলে দ্রুত বিকাশ করে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। সোহরাব হোসেন বলেন, প্রথমে তার কথা আমার বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু বন্দির নাম ঠিকানা, মামলা এসব তথ্য সঠিকভাবে তুলে ধরায় আমি বিশ্বাস করি এবং পরে তাকে ১০ হাজার টাকা বিকাশ করি। পরে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রোববার এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
সোহরাব হোসেন বলেন, এর আগে রফিকুলের সঙ্গে আমার কয়েক দফা ফোনে কথা হয়েছে। কোনোভাবে প্রতারকরা আমার নম্বরটি পেয়ে গেছেন। কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ডলার আহমেদ জানান, নারী নির্যাতনের একটি মামলায় তার ছোট ভাই নাসির উদ্দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। শনিবার একই কায়দায় এক ব্যক্তি তার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে সেই মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, কারাভ্যন্তরের মোবাইল বুথ থেকে আমাকে কল করেছিল ছোট ভাই নাসির উদ্দিন। ডলার আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার মোবাইল নম্বর বাইরে থাকা প্রতারকদের কাছে কিভাবে এলো? ভেতরের কেউ না কেউ এই নম্বর প্রতারকদের কাছে সরবরাহ করছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম বলেন, এরকম অভিযোগ মাঝেমধ্যে আমরা পেয়ে থাকি। কয়েকজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তবে চক্রটিকে থামানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে স্বজনদের সচেতন হতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে সরকারিভাবে তার চিকিৎসা করা হয়। এখানে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
একইভাবে কেউ যদি মারামারি করে তার বিরুদ্ধে কারা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এখানেও টাকা নেওয়ার কথা বলা অবান্তর। জেলার বলেন, নতুন বন্দি এলে আমরা তাকে এসব বিষয়ে ব্রিফ করি। বন্দিরা যেন এসব বিষয়ে স্বজনদের সতর্ক করে দেয় সেটাও বলে দেই।
এ টি