এনবি নিউজ : রাজধানীর মহাখালীতে খন্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত ময়না মিয়ার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন শিল্পীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকার কথা শিকার করে পুরো ঘটনাই পুলিশের কাছে তুলে ধরেছেন তিনি। তবে স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যার পরেও কোনো অনুশোচনা কাজ করছেনা তার মধ্যে। উল্টো তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বলছেন, হত্যার পর মনে হচ্ছে, মনের সব ক্ষোভ মিটে গেছে। নিজেকে খুব হালকা লাগছে। এখন হাসি মুখেও ফাঁসিতে ঝুলতে রাজি আছি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, আজ দুপুর ১টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ বলেন, স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাতেমা খাতুন জানিয়েছে, গত ২৩ তারিখ ময়না মিয়া কড়াইল বস্তিতে তার বাসায় ছিলেন। পারিবারিক কলহ,টাকা-পয়সা বন্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য আরো চরম আকার ধারণ করে। পরে ময়না মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফাতেমা। সে মোতাবেক দুই পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে এনে বেশ কয়েকটা ট্যাবলেট জুসের সাথে মিশিয়ে ময়না মিয়াকে খাওয়ানো হয় শুক্রবার রাতে।
এতে ভিকটিম সারারাত ও পরের দিন অচেতন থাকার পর শনিবার সন্ধ্যার দিকে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পায়। ঘুম থেকে উঠে আবার স্ত্রীকে গালমন্দ করে আক্রমণ করতে গেলে নিজেই বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ভিকটিম পানি পানি বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমার ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস আবার তার মুখে ঢেলে দেয়। এ পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে ময়নার দুই হাত শরীরের সাথে বেঁধে রাখে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়।
পরে ময়না মিয়ার বুকের উপরে বসে চাকু দিয়ে গলা কাটা শুরু করে। কিছুটা গলা কাটার পর ময়না মিয়া ধস্তাধস্তি করে ফাতেমার হাতে খামছি ও কামড় বসিয়ে দেয়। এতে ফাতেমার রাগ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা দু’জনই খাট থেকে নিচে পড়ে গেলে, ফাতেমা আবার ময়না মেয়ের বুকের উপর বসে গলার বাকি অংশ কেটে দেয়। সারারাত এবং পরের দিন রবিবার সারাদিন লাশ ওভাবেই ফ্লোরে পড়ে ছিল।
হত্যার ২৪ ঘন্টা পর রবিবার রাতে ধারালো দাঁত দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করেন ফাতেমা। পরে ১৩০০ টাকা দিয়ে একটি রিক্সা ভাড়া করে প্রথমে শরীরের মূল অংশ ফেলা হয়, এরপর মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে দুই হাত দুই পা ভর্তি আরেকটি ব্যাগ ফেলে বাসায় চলে আসে ফাতেমা।
পরে খন্ডিত মস্তক কি একটি লাল ব্যাগে ভরে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের গুলশান লিখে ফেলে দেয়। করে সে বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে থাকে। ধারণা ছিল ময়না মিয়ার লাশ কেউ শনাক্ত করতে পারবে না। তিনিও (ফাতেমা) সন্দেহের বাইরে থাকবেন।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ময়না মিয়ার পরিচয় শনাক্ত এরপর মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফাতেমা খাতুন কে গ্রেফতার করা হয়। ইতিমধ্যে সে ঘটনার সবকিছু স্বীকার করেছেন। কার দেখানো মতেই ভিকটিমের রক্তমাখা জামাকাপড়, ধারালো ছুরির ধারালো দাঁত বিষাক্ত পেয়ালা শিলপাটা উদ্ধার করা হচ্ছে। ঘটনায় বনানী থানায় কে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী। মামলাটি আরও অধিকতর তদন্ত করে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ/আর/জি